ব্যবসা বাণিজ্য

অল্প পুঁজিতে মোবাইল ফোনের ব্যবসা । মোবাইলের দোকান এর ব্যবসা আইডিয়া

আধুনিক যুগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না এমন মানুষ নেই বললেই চলে এক্ষেত্রে মোবাইলকে কেন্দ্র করে মোবাইল ফোনের ব্যবসা হতে পারে বর্তমানের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে একটি।

 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে ২০১১ সাল অব্দি মোবাইল ফোনের ইউজার সংখ্যা ৬ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছে [] এবং বর্তমানে পৃথিবীর ৮৭% মানুষ মোবাইল ফোনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এমন হিউজ পরিমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী থাকার ফলে মোবাইল ফোনের ব্যবসা পৃথিবী জুরে ব্যাপক জনপ্রিয়।

 

শুধু কি বাইরের দেশেই? বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের প্রভাব কি? জানা গেছে বাংলাদেশে প্রথম মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৯৩ সালে [] এবং বর্তমানে এমন কোনো ফ্যামিলি খুজে পাওয়া যাবে না যে ফ্যামিলিতে কেউ না কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। তাই দেশের বাইরেই নয় মোবাই ফোনের ব্যবসা আমাদের দেশেই খুব ট্রেন্ডিং সব সময়ের জন্য।

 

এতো এতো মানুষ যেহেতু মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে এবং মোবাইল ফোনের কাস্টমারের সংখ্যা এতো ব্যাপক এক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের ব্যবসা করতে চাওয়াটা হবে বর্তমানে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত গুলোর মধ্যে একটি।

 

তাহলে জেনে নিন কিভাবে মোবাইল ফোনের ব্যবসা শুরু করবেন? কোথায় থেকে পন্য এনে কোথায় বিক্রি করবেন, এমনকি মোবাইল ফোনের সাথে যুক্ত সকল খুঁটিনাটির বিস্তারিত আলোচনা। একেবারে শুরু থেকে ধাপে ধাপে এবং সহজ ভাষাতে প্রতিটি বিষয় উপস্থাপন করবো। শুরু করা যাক। 

 

দোকান বা শোরুম ভাড়া নেয়া

 

এই ব্যবসা করার জন্য প্রথমেই যা প্রয়োজন তা হচ্ছে একটা মানসম্মত জায়গা। আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী জায়গা নির্ধারন করতে হবে। যদি আপনার টার্গেট থাকে হোলসেল মোবাইল ফোন বিক্রির তাহলে গোডাউন টাইপের জায়গা ভাড়া নেয়া উচিৎ। অন্যদিকে আপনি যদি চান খুচরা দামে মোবাইল বিক্রি করবেন তাহলে লোকসমাগম রয়েছে এমন জায়গা বেছে নেয়া।  

 

এক্ষেত্রে মোবাইল ফোন কিনতে আসা কাস্টমার যাতে যাতায়াত করতে পারে ঠিকভাবে এরুপ স্পেস, পর্যাপ্ত পরিমানের নিরাপত্তা সহ যাবতীয় সার্ভিস যা আপনার কাস্টমারকে স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে উৎসাহীত করে এরুপ একটি পরিবেশ গড়ে তোলা। 

 

পরবর্তীতে দোকানের সাজ সজ্জার দিকে নজর দিকে হবে। যদি খরচের দিকে বিবেচনা করে বলা হয় তাহলে আনুমানিক ৪০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা অব্দি খরচ করা যেতে পারে একটা শো রুম সাজাতে। এর বেশি বা কম নির্ভর করবে আপনার চাহিদার উপর। দোকান ভাড়া ও সাজ সজ্জার পরবর্তী ধাপে থাকবে ব্যবসায়ের অনুমদন সংক্রান্ত কার্যক্রম যা নিয়ে নিচের স্টেপে বিস্তারিত বলা হচ্ছে… 

 

দোকানের অনুমদন :

 

আমরা জানি যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে হলে ব্যবসা করার জন্য একটা ট্রেড লাইসেন্স অবশ্যই প্রয়োজন হয়। এটি মূলত একটা সম্মতি যা দেশের সরকার দ্বারা প্রদান করা হয়। এটি খুব প্রয়োজন কারন যখন আপনি বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সাথে ডিল করতে যাবেন বা তাদের ডিলারশিপ গ্রহন করতে যাবেন তখন এই সংক্রান্ত কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। তাছাড়া আইনি ভাবে সকল প্রকার সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য হলেও ট্রেড লাইসেন্স করাটা গুরুত্বপুর্ন। আর মূলত এটাই দোকানের জন্য অনুমদন সরূপ।

কি কি বিক্রি করা যেতে পারে?

 

সাভাবিক ভাবে মোবাইল ফোন এবং এর সাথে জরিত যাবতীয় প্রডাক্ট গুলো আপনি আপনার দোকানে রাখতে পারেন। একটা মানুষ যখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সে তখন কেবল ওই জিনিসের মধ্যেই সিমাবদ্ধ থাকে না বরং ওইটার সাথে জরিত আরো অন্যান্য প্রোডাক্টের উপর আকৃষ্ট হয়। এরুপ পন্যের মধ্যে রয়েছে :

 

  • চার্জার,
  • ক্যাবল,
  • হেডফোন,
  • স্কিন প্রোটেক্টর,
  • ব্যাক কভার
  • হ্যান্ড রিং
  • মোবাইল হোল্ডার

 

সহ আরো অনেক প্রোডাক্ট। তাছাড়াও আপনার দোকানের এড়িয়া ভিত্তিক পরিসংখ্যান করে ওই এড়িয়াতে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী প্রোডাক্ট আপনি বিক্রির জন্য রাখতে পারেন।

 

মোবাইল ফোনের ব্যবসা এর প্রচার প্রচারণা

 

শুধু যে মোবাইল ফোনের ব্যবসা তা না, যেকোনো ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সুফল দেখতে চাইলে সেই ব্যবসার প্রচার খুব বেশি প্রভাব ফেলে পন্য বিক্রির ক্ষেত্রে। নতুন ব্যবসা শুরু করার পর কাঙ্ক্ষিত গ্রাহককে জানান দেয়ার জন্য প্রচার করতে হবে। আপনার দোকানে কাস্টমার জমানোর জন্য বিভিন্ন অফার দিতে হবে। অফারে আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন ইচ্ছুক মানুষ আপনার প্রোডাক্ট কিনতে আসবে এবং তাদের দ্বারাই প্রচারণা বাড়তে থাকবে। 

 

যতদিন পর্যন্ত আপনার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাচ্ছেন ততদিন নানা রকম ক্যাম্পাইন করে গ্রাহকের মন জয় করতে হবে। ব্যবসার শুরুতেই মুনাফার চাহিদা রাখলে হবে না প্রথমে গ্রাহকের কাছে ভ্যালু সৃষ্টি করতে হবে। 

দোকানের জন্য কর্মী সংগ্রহ

 

দোকান ভাড়া কমপ্লিট, দোকান সাজানো কমপ্লিট। এবার প্রয়োজন গ্রাহক সেবা প্রদানের জন্য শ্রমবল। একটা শোরুমে সর্বনিম্ম ২ জন কর্মী থাকা প্রয়োজন যারা গ্রাহকের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর এবং গ্রাহকের মোবাইলের যাবতীয় সমস্যার সমাধান দিবে। ধরুন যেমন স্ক্রিন প্রোটেক্টর লাগানো, টুকটাক মোবাইল সার্ভিসিং ইত্যাদি। তবে কর্মী নির্বাচনে সচেতন থাকতে হবে, কর্মী যেনো সম্পুন্ন বিশ্বাস যোগ্য হয় কারন একজন কর্মীর উপরের দোকানের বিক্রি অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভর করে। 

অনলাইনে শোরুম বা দোকানকে সাবমিট করা

 

বর্তমানে যে জিনিসটা অনলাইনে নেই সেটা অনেকাংশে পিছিয়ে থাকে। আজকাল ছোট থেকে ছোট জিনিসও মানুষ আগে অনলাইনে সার্চ করে। এক্ষেত্রে পন্য কেনার ক্ষেত্রে পন্যের বিস্তারিত তথ্য অনলাইন থেকে সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার দোকানকে অনলাইনে সাবমিট, মানে দোকানের একটা ওয়েবসাইট ও সোসাল মিডিয়া প্রোফাইল থাকলে সেটা গ্রাহকের কাছে খুবই পজিটিভ ইমেজ দেখাবে।

 

ফোনের প্রতিনিয়ত আপডেট প্রাইজিং, ফিচার্স, ও আপনাদের সার্ভিস সম্পর্কে জানানোর মাধ্যমে কাস্টমার পেতে পারেন। 

মোবাইল ফোন ও এক্সেসোরিস কোথায় পাবেন?

 

মোবাইল ফোনের দোকান অহরহ থাকলেও পাইকারি হোলসেল মার্কেট এর পরিমান লিমিটেড। বর্তমানে বাংলাদেশে পাইকারি মোবাইল ফোনের বাজার বেশ কিছু স্থানে রয়েছে যার মধ্যে পপুলার হলো ঢাকার গুলিস্থানের “সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট’ এখনে মোটামোটি সব ধরনের বাটন ফোন ও স্মার্টফোন পাইকারি মুল্যে পাওয়া যায়।

 

এখান থেকে পাইকারি মুল্যে মোবাইল ফোন কিনতে চাইলে আপনাকে সর্বনিম্ম ১০ টি মোবাইল একসাথে কিনতে হবে। সর্বোচ্চ আপনি যতটাই নেন না কেনো সর্বনিম্ম ১০ টি ফোন নিতে হবে। তবে মার্কেটে দোকান ভেদে কিছু ভিন্নতা দেখা যেতে পারে। 

 

মোবাইল ফোনের ব্যবসা করার জন্য আরেকটা বিশেষ উপায় হলো চায়না, ইন্ডিয়া থেকে ফোন আমদানী করা। আপনার যদি সেরকম কোনো ব্যবস্থা থাকে তাহলে খুব লাভজনক ব্যবসা গড়ে তুলতে পারবেন এই সেক্টরে। মূলত বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের যতগুলো মোবাইলের দোকান বা শো রুম আছে প্রায় সবাই দেশের বাইরে থেকে ফোন আমদানী করে ব্যবসা কন্টিনিউ করছে। 

 

এছাড়াও ব্রান্ডের ফোন যেমন : স্যামসাং, শাওমি, রিয়েলমি, ভিভো, ওপ্পো এর ডিলারদের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে পাইকারিতে রিজেনেবল প্রাইজেই মোবাইল ফোন কিনতে পারেন। 

 

এরপর আসে মোবাইলের এক্সেসোরিস এর বিষয় এটাও আপনি গুলিস্থান থেকেই নিতে পারবেন আপনার যেরুপ কোয়ান্টিটির প্রয়োজন হয় সেখানে হাজার দোকান যাচাই বাছাই করে আপনার সুবিধা ও চাহিদা মোতাবেক প্রোডাক্ট গুলো কিনতে পারবেন। 

মোবাইল ফোনের ব্যবসা করতে কত পুঁজি প্রয়োজন?

 

যদি একেবারে শুরু থেকে খরচ হিসেব করা হয় তাহলে দোকান ভাড়া নেয়া, দোকান সাজানো, দোকানের জন্য মালামাল কেনা থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন ও এক্সেসোরিস কেনা অব্দি আনুমানিক ২ লাখ থেকে ৩ লাখ অব্দি খরচ যাবে প্রথম দিকে। পরবর্তী খরচের হিসেব হবে আপনার ম্যানেজমেন্টের উপর।

মোবাইল ফোনের ব্যবসাতে লাভ কেমন?

 

সাধারনত একটি মোবাইল ফোনে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লাভ করা যায়। এবং মোবাইল এক্সেসোরিসে ৩০ তেকে ৩০ শতাংশ লাভ করা যায়। তবে এড়িয়া ভিত্তিক বিবেচনায় অনেকে অনেক বেশি লাভ ও করতে সক্ষম হয়। 

ইতিকথা

 

মোবাইল ফোনের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপনার এড়িয়ার মানুষের চাহিদার উপর পরিসংখ্যান করুন, তাদের এক্সপেক্টেশন বুজুন এবং ওইভাবেই পন্য নির্বাচন করুন। আপনার এড়িয়া শহরে হলে প্রতিনিয়ত আপডেট প্রোডাক্ট এবং গ্রামে পর্যায়ে হলে অল্প মূল্যের ভালো মোবাইল ও এক্সেসোরিস গুলো রাখার চেষ্টা করুন। গ্রাহক সন্তুষ্টির ব্যাপারে প্রবল খেয়াল রাখবেন এবং বিক্রি পরবর্তী সার্ভিস ঠিক ভাবে দিতে পারলে আপনার মোবাইল ব্যবসা ভালো ভাবে গ্রো আপ করবে। আপনার জন্য শুভকামনা। 

 

Bangla Alo

Recent Posts

৫টি জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গানের লিরিক্স

প্রতিটা দেশেরইই একক কিছু দেশাত্মবোধক গান থাকে তেমনি বাংলাদেশেও রয়েছে এমন অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান।  আমরা…

1 day ago

ইসলামিক পদ্ধতিতে ওজন কমানো এবং সুস্থ থাকার উপায় জানুন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমাদের আজকের জানার বিষয় হলো -…

2 days ago

বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন, নিজে চাষ শুরু করুন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই আল্লাহর ইচ্ছায় অনেক ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে বেগুন চাষ…

2 days ago

ওমরা ভিসা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য ২০২৪

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আশা করি মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ও অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো…

2 days ago

কনফেকশনারি ব্যবসার আইডিয়া || শুরু থেকে শেষ অব্দি

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই ভালো আছেন। আমাদের দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ…

2 days ago

মন ভালো রাখার উপায় || মন সুস্থ রাখার ১০ টি টিপস

মানুষের মন যেহেতু আছে এটা ভালো কিংবা খারাপ থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।  একটা…

1 month ago