বাংলাদেশের উত্তর – পশ্চিমাঞ্চলে রংপুর জেলাটি অবস্থিত। বাংলাদেশের ৮ টি বিভাগের মধ্যে রংপুর একটি। জানুন রংপুরের দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিকভাবে রংপুর একটি বিখ্যাত জেলা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৪ সালে জেলা পুনর্বিন্যাসের ফলে বৃহত্তর রংপুর জেলা বিভক্ত হয়ে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও গাইবান্ধা জেলা গঠিত হয়।
রংপুর জেলা রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। রংপুরের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- কারমাইকেল কলেজ, তাজহাট রাজবাড়ী, ভিন্নজগত, রংপুর চিড়িয়াখানা, পায়রাবন্দ, ঘাঘট প্রয়াস পার্ক, চিকলির পার্ক, ইত্যাদি।আমরা আজকে বিস্তারিত জানব রংপুরের দর্শনীয় স্থানসমূহ নিয়ে।তার আগে রংপুর জেলার পরিচিতি জেনে নিই।
ইতিহাস থেকে জানা যায় যে উপমহাদেশে ইংরেজরা রংপুর অঞ্চলের মাটি উর্বর হবার কারণে এখানে প্রচুর নীলের চাষ করত।এই নীলকে স্থানীয় লোকজন রঙ্গ নামে জানত। কালের বিবর্তনে সেই রঙ্গ শব্দ থেকে রঙ্গপুর এবং তা থেকেই আজকের রংপুর হয়েছে।
অপর একটি প্রচলিত ধারণা আছে যে প্রাগ জ্যোতিস্বর নরের পুত্র ভগদত্তের রঙ্গমহল এর নামকরণ থেকে এই রঙ্গপুর নামটি আসে। এই জেলার আরেক নাম হল জঙ্গপুর । ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব থাকায় অনেকে এই জেলাকে যমপুর বলেও ডাকত। তবে রংপুর জেলা সুদূর অতীতে আন্দোলন প্রতিরোধের মূল ঘাঁটি ছিল।
তাই সে হিসেবে জঙ্গপুর নামকেই রংপুরের আদি নাম ধরা হয়। জঙ্গ অর্থ হল যুদ্ধ, আর পুর অর্থ শহর। গ্রাম থেকে আসা মানুষ প্রায়ই ইংরেজদের অত্যাচারে নিহত হত বা ম্যালেরিয়ায় মারা যেত। তাই সাধারণ মানুষ ভয়ে শহরে আসত না।ত্রিশের দশকের শেষের দিকে এ জেলায় কৃষক আন্দোলন যেরূপ বিকাশ লাভ করেছিল তার কারণে রংপুরকে লাল রংপুর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।
রংপুর জেলাটি ৮টি উপজেলায় বিভক্ত। যথা:
কাউনিয়া,গংগাচড়া,তারাগঞ্জ,পীরগঞ্জ,
পীরগাছা,বদরগঞ্জ,মিঠাপুকুর এবং
রংপুর সদর।
রংপুর একটি দর্শনীয় জেলা।এ জেলায় রয়েছে অসংখ্য সুন্দর ও ঐতিহাসিক স্থান। তাই এ জেলাটিকে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ধরা যায়।কিন্তু ঘুরতে আসার আগে যদি দর্শনীয় স্থানগুলোর ব্যাপারে যথাযথ জ্ঞান ও তথ্য থাকে তাহলে খুব ভালো হয়।তো প্রথমে বলছি প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক নিয়ে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রায় ১১০০ একর জায়গা নিয়ে ২০১৩ সালে রংপুরের ঘাগট নদীর দুপাশে গড়ে তুলেছে প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক।রংপুর এসে যদি এ জায়গাটিতে না যান তো আপনার ভ্রমণ ২০ আনা বৃথা।ছোট এ পার্কটি অনেক ছিমছাম ও গোছানো।
পার্কটির পাশেই বয়ে চলেছে ছোট নদী ঘাগট।নদীর তীর ঘেঁষে আছে সেনাবাহিনীর রেস্তোরাঁ। নদীতে বিকেলের সূর্যের সোনালী আলোয় সুন্দর মুহুর্তে চা,কফি বা অন্য কোন খাবার প্রিয়জনকে নিয়ে খেতে চাইলে এখানে চলে আসুন।নদীর তীরের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করতে এ জায়গাটি সেরা জায়গা।
রংপুরের দর্শনীয় স্থানসমূহ এর মধ্যে রয়েছে রংপুরের মুল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে বেসরকারিভাবে ১শ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে ভিন্ন জগত নামে বিনোদন পার্ক। এ পার্কটি নানা ধরনের পাখির কলকাকলিতে পূর্ন থাকে।কারন এখানে আছে দেশি বিদেশি হাজার প্রজাতির গাছ।পাখিরা নীড় হিসেবে গাছগুলোকে বেছে নিয়েছে।এখানে ঢোকার পর প্রধান গেট পেরোলেই চোখে পড়বে বিশাল লেক।লেকের পরেই আছে লোহার একটি ব্রীজ। ব্রীজ পেরোলেই সামনে পড়বে ভিন্নজগতের মধ্যে আরেকটি ভিন্নজগত।
এখানে রয়েছে দেশের প্রথম প্লানেটোরিয়াম,রোবট স্কিল জোন,স্পেস জার্নি,জল তরঙ্গ,সি প্যারাডাইস,আজব গুহা,নৌকা ভ্রমণ, শাপলা চত্বর,বীরশ্রেষ্ঠ ও ভাষা সৈনিকদের ভাস্কর্য, ফ্লাই হেলিকপ্টার ইত্যাদি।আরও আছে ৮০০/৯০০ গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা,৫০০ টিরও বেশি পৃথক দলের জন্য পিকনিক করার ব্যবস্থা,৭ টি কটেজ,শিশুদের জন্য ড্রিম প্যালেস ইত্যাদি।
তাজহাট রাজবাড়ি বা জমিদারবাড়ি বাংলাদেশের রংপুর শহরের অদূরে তাজহাটে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদ যা এখন একটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রংপুরের এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান।রাজবাড়ীটি রংপুর শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।জমিদার মান্নালালের দত্তক পুত্র গোপাল এ রাজবাড়ি নির্মান করেন।এ প্রাসাদটির মুল আকর্ষণ এর সিঁড়ি যা নির্মিত ইতালীয় ঘরানার মার্বেল পাথর দিয়ে।অনেকটা আসাম মঞ্জিলের মত দেখতে চারতলা এ প্রাসাদের ভেতরেও রয়েছে অসংখ্য কক্ষ, গোসলখানা, অতিথিশালা।মুঘল স্থাপত্য থেকে অনুপ্রাণিত এ প্রাসাদের নকশাটি যে কারও নজর কাড়বে।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হল রংপুরের লালদিঘি নয় গম্বুজ মসজিদ বা লালদিঘি মসজিদ যা রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।
বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া খাতুন (বেগম রোকেয়া)-এর পৈত্রিক বাড়ি পায়রাবন্দ গ্রাম এই রংপুরের এক ঐতিহাসিক স্থান।এছাড়াও এখানে আছে বেগম রোকেয়ার বাড়ি সংলগ্ন প্রাচীন মসজিদ।অষ্টাদশ শতাব্দির তৈরি এ মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।এই মসজিদ টি এখন পুনঃ নির্মাণ করা হয়েছে । মসজিদ টির অবস্থান বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের সামনে।
রংপুরের পীরগাছার স্থানীয় লোকজন মন্থনার জমিদার বাড়িকে দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি বলে ডাকে।এটিও একটি দর্শনীয় স্থান যা দেখতে যেতে পারেন।এটি ১ তলা বিশিষ্ট ৩ টি প্রধান আবাসন ভবন এবং রয়েছে ০৩টি মন্দির।
রায়পুর জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত পীরগঞ্জ উপজেলার একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।আখিরা নদীর তীরঘেঁষে রায়পুরের জমিদার লাসমন সিংয়ের বাড়ি। তার মৃত্যুর পর তিন ছেলে মুরালি সিং,বদি সিং ও বীরেন সিং চলে যান ভারতে। লাসমন সিংয়ের ১৯শ’ বিঘা জমি পড়ে থাকে এ উত্তরের জনপদে। এরপর জমিদারবাড়ি দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিতরা এ বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়ে যান।এটিও দেখার মত একটি জায়গা।
শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে অবস্থিত একটি প্রাচীন দর্শনীয় স্থান। এটি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত একটি সুপ্রাচীন মাজার। এটি বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।ধারণা করা হয় এটি মোঘল আমলের শেষের দিকে তৈরি হয়েছিল।
ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায় অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।পুরো ভারতবর্ষের মধ্যে এই ইটাকুমারী এলাকাটি উন্নত শিক্ষা ও সংস্কৃতিময় এলাকা ছিল বলে একে অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় নবদ্বীপ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ইটাকুমারীর জমিদার রাজা রঘুনাথ চন্দ্র রায় এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। তার ছেলে শিব চন্দ্র রায় এই জমিদার বাড়ি থেকেই একই উপজেলার মন্থনা জমিদার বাড়ির জমিদার দেবী চৌধুরানীর সাথে মিলে কৃষক প্রজা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
মিঠাপুকুর বড় মসজিদ বাংলাদেশের রংপুরের দর্শনীয় স্থানসমূহ এর মধ্যে একটি।এটি রংপুর শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে ও রংপুর-বগুড়া মহাসড়কের উপর অবস্থিত।মিঠাপুকুর নামক উপজেলা সদরে এ মসজিদটি অবস্থিত বলে একে মিঠাপুকুর বড় মসজিদ বলে।এ মসজিদের চার কোনে রয়েছে চারটি মিনার। সেগুলি আট কোনাকার করে তৈরি।
মিনারগুলি ছাদের কিছু উপর উঠে ছোট গম্বুজ শেষ। সামনের দেয়ালে তিনটি প্রবেশ পথ আছে।সামনের দেয়ালে আছে কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথ। ভিতরে পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি মিহরাব। মসজিদের ছাদের উপরে আছে তিনটি কন্দকারে নির্মিত সুন্দর গম্বুজ।
পরিশেষে বলব রংপুর জেলা ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক বিশেষ স্থান।অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে এ জেলায়।আজকে রংপুরের দর্শনীয় স্থানসমূহ নিয়ে অনেক তথ্য জেনছি।এসব ছাড়াও আরও অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে রংপুরে।যা একবারে বর্ননা করা সম্ভব নয়।এবার যাওয়ার প্রস্তুতি নিন রংপুরে।পরিবার ও প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে ঘুরে আসুন রংপুর জেলা।কয়েকদিন সময় নিয়ে পুরো রংপুর শহর ঘুরে দেখতে পারেন।আশা করি জীবনের অন্যতম সেরা ভ্রমণ হবে।
শরীর ভালো তো মন ভালো” ছোটবেলা থেকে আমরা এই কথায় অভ্যস্ত হলেও ঠিকঠাকভাবে মানতে নারাজ। মানসিক সুস্থতা ও শারীরিক স্বাস্থ্য…
লাললালালালালালালালালালালালালালালালালালালালা যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়?যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়তবে…
ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে পুরো দেশে সবুজায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে কাতার সরকার। বাংলাদেশি নার্সারি ব্যবসায়ীরাও অংশ নিচ্ছে সবুজায়ন প্রকল্পে। কাতারে ফুটবল…
এআইয়ের সাহায্যে সরু রাস্তার নির্দেশনাও দেখতে পারবেন চালকরা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে কুয়াশা ও বন্যার পানি রয়েছে কি-না, তা গুগল ম্যাপসের…
রাগের কারণে আপনার কর্মজীবনেও প্রভাব পড়ে একটুতেই রেগে যান? রাগের মাথায় প্রিয়জনকে কটূ কথা বলে আফসোস করতে হয়? এবার একটু…
সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং দুদেশের জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে ১. ইসলামপন্থি কিংবা জঙ্গিরা নয় সম্প্রতি যে আন্দোলনের মুখে শেখ…
This website uses cookies.