বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম জেলা হল খুলনা। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত খুলনার দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত। রূপসা ও ভৈরব নদীর তীরে এ জেলাটি অবস্থিত।
শিল্প, বাণিজ্য, প্রকৃতি ও লোকজ সংস্কৃতির এক অভূতপূর্ব সমাবেশ ঘটেছে এ জেলায়। রূপসা, ভৈরব, চিত্রা, পশুর, কপোতাক্ষসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নদী বৈচিত্রে ভরপুর এ জেলা।এখানে রয়েছে চিংড়ি শিল্প ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প।এজন্য খুলনাকে বাংলাদেশের শিল্পনগরী বলা হয়।পৃথিবী বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন এ জেলায় অবস্থিত।
অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের স্থান খুলনা জেলা। খুলনার দর্শনীয় স্থানসমূহ ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
সুন্দরবন ও এর বিভিন্ন পর্যটন স্পট, কুঠিবাড়ি, দক্ষিণডিহি, পিঠাভোগ, রাড়ুলী, সেনহাটি, বকুলতলা, শিরোমণি, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি সৌধ, চুকনগর, গল্লামারী, খানজাহান দ্রম ইত্যাদি।আজকে খুলনা জেলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের বর্ননা দিচ্ছি।
বাংলাদেশের ৮ টি বিভাগের মধ্যে খুলনা একটি।খুলনা জেলা এ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।প্রায় ৬০০ বছর আগে পীর খানজাহান এই জেলায় এসেছিলেন ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য। তিনি প্রথমে সুন্দরবন এলাকায় তার বসতি স্থাপন করেন এবং বাগেরহাটের আশেপাশের এলাকায় তার শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া স্বদেশী আন্দোলনের প্রচারের জন্য মহাত্মা গান্ধী ১৯২৬ সালে খালিসপুরে আসেন।
এ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮২ সালে।খুলনা পৌরসভা ঘোষণা করা হয় ১৮৮৪ সালে। খুলনাকে সিটি কর্পোরেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয় ৬ আগস্ট, ১৯৯০ সালে।
খুলনা জেলার উপজেলাগুলি হল :
খুলনা জেলার দর্শনীয় স্থানের কথা বললে প্রথম আসে সুন্দরবনের কথা।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি হল সুন্দরবন। এ বনটি শুধু বাংলাদেশ নয়,ভারত জুড়েও অবস্থিত।তবে বাংলাদেশে যে অংশটুকু রয়েছে তার আয়তন ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্বের ঐতিহ্যমন্ডিত স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ সুন্দরবনকে জীব ও উদ্ভিদ জাদুঘর বলা যায়। এ বনে প্রচুর সুন্দরী গাছ রয়েছে বলে এই সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে এই বনের নাম সুন্দরবন রাখা হয়।
সুন্দরবন বিশাল একটি অঞ্চল হলেও বনের সব জায়গায় ঘুরতে যাওয়া যায় না। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনের কয়েকটি জায়গায় যেতে পারবেন।সাধারণত শীতে সমুদ্র ও নদী শান্ত থাকে বিধায় এসময় সুন্দরবন ঘুরতে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে করমজল,হারবারিয়া, কছিখালি,কটকা,জামতলা,হিরন পয়েন্ট, দুবলার চর উল্লেখযোগ্য।একসাথে পুরো সুন্দরবন দেখতে হলে আপনাকে কয়েকদিন সময় নিয়ে দেখতে হবে এবং জাহাজ বা লঞ্চে ঘুরতে যেতে হবে অনেক জায়গায়।
খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলায় পদ্ম ফুল সমৃদ্ধ ভূতিয়ার পদ্মবিলটি অবস্থিত।প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এই পদ্মবিল যেন এক স্বর্গপুরি। হাজার হাজার পদ্ম ফুল ফোটে সমগ্র বিল জুড়ে। অপরুপ এ দৃশ্য কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবনের ক্লান্তি ঘুচিয়ে দেবে নিমিষেই ।সকাল ৬টা-৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পদ্ম ফুল দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কারণ বেলা বাড়ার সাথে সাথে পদ্ম ফুলের পাপড়িও বুজে যেতে থাকে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এই ভূতিয়ার পদ্মবিল ভ্রমণের সবচেয়ে আদর্শ সময়।
খুলনার দর্শনীয় স্থানসমূহের একটি হল সুন্দরবনের একটি দ্বীপ পুটনী দ্বীপ। স্থানীয় বাসীন্দারা একে দ্বীপচর বলে। সমুদ্র আর ঘন বনাঞ্চলের মাঝ দিয়ে আছে সবুজ ঘাসের প্রান্তর এবং আঁকাবাঁকা খাল। জোয়ারের সময় পুরো এলাকা ভাসমান থাকে আর ভাটার সময় দেখা মিলে ধু ধু বালুচরের। সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দেখা যায় আড়পাঙ্গাসিয়া নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায়।
হরিণ আর মাছের অভয়ারণ্য হওয়ার কারণে পুটনী দ্বীপে জেলে ও সাধারণ মানুষ তেমন আসে না। তবে অনেকে কাকড়া আহরণ করতে পুটনী দ্বীপে এসে থাকেন। এই দ্বীপে হরিণ এবং মাছের বিচরণ থাকলেও এখানে কোন বাঘের উপদ্রব নেই।তাই বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন অপুর্ব সুন্দর এ পুটনী দ্বীপ।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের দক্ষিণাংশে খুলনা অঞ্চলের কুঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত বন্যপ্রাণীর একটি সংরক্ষিত অভয়ারণ্যের নাম হিরণ পয়েন্ট। ইউনেস্কো ঘোষিত অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্য হিরণ পয়েন্টের আরেক নাম নীলকমল। অভয়ারণ্য হওয়ায় হিরণ পয়েন্টে সহজেই বানর, হরিণ, বাঘ সহ নানা প্রজাতি বন্যপ্রাণী, সরীসৃপ ও পাখিরা নিজেদের নিরাপদ প্রাকৃতিক আবাসস্থলে পরিণত করেছে। ফলে এখানে সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, লার্জ এগ্রেট, কাঁদা খোঁচা, ধ্যানী বক প্রভৃতি পশুপাখির দেখা পাওয়া যায়। এখানে যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই বন্ধ বিভাগের অনুমতি লাগবে।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনকে সমাধিস্থ করা হয়েছে খুলনা জেলার রূপসা নদীর পূর্ব পাশে।১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে একটি যুদ্ধজাহাজে অবস্থানকালে শত্রুসেনাদের বিমান হামলায় শহীদ হন এ বীর।তার সমাধিটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য বহন করছে।তাই বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি দেখতে আসতে পারেন খুলনা।
খুলনা জেলায় ১৯৯৮ সালে শিববাড়ি মোড়ের পাবলিক হলের পাশে গড়ে তোলা হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাদুঘর।যা খুলনার দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে একটি।এ জাদুঘরে আছে খান জাহান আলীর সমাধি,যশোরের ভরত ভায়ানা,ঝিনাইদহের বারবাজারের মত কতিপয় জায়গা খনন করে পাওয়া দুর্লভ নিদর্শনসমূহ।
আরও আছে গুপ্ত, পাল,সেন ও ব্রিটিশ আমলে প্রাপ্ত কষ্টি পাথর,পুরাকীর্তি, পোড়া মাটি ও কালো পাথরের মুর্তি, খুলনা জেলার নানা স্থানের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ইত্যাদি সংরক্ষিত আছে।এ জাদুঘরটি দর্শন করে খুলনা তথা বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক জ্ঞান লাভ করতে চাইলে ঘুরে আসুন।
খুলনা জেলার সাথে দক্ষিণ অঞ্চলের সব জেলা ও মংলা বন্দরের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে রূপসা নদীর উপরে গড়ে ওঠা খান জাহান আলী সেতুর মাধ্যমে। তাই এ সেতুটিকে খুলনার প্রবেশদ্বার বলা হয়।১.৬০ কিলোমিটার লম্বা সুন্দর এ সেতু টির উপর থেকে পুরো খুলনা শহরটি দেখা যায়।তাই এ সেতুটি দেখতে যেতে পারেন খুলনায়।
খুলনা শহর থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরত্বে ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামেই রয়েছে একসময়ের জাঁকজমকপূর্ণ রায় বাড়ি তথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরালয়। বর্তমানে এটি ‘রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’ নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার পত্নীর আবক্ষ ভাষ্কর্য,দ্বিতল ভবন, ঘন সবুজ বাগান, পানের বরজ এবং নার্সারি।এ স্থানটি দর্শন করতে যেতে পারেন।
খুলনা জেলার আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল করমজল পর্যটন কেন্দ্র।এটি সুন্দরবনের পশুর নদীর তীরে অবস্থিত। বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ৩০ হেক্টর জমির উপর পর্যটন কেন্দ্রটি তৈরি হয়েছে। একদিনে সুন্দরবন ভ্রমণ স্বাদ নিতে করমজল হচ্ছে সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা।এখানে রয়েছে কুমির, হরিণ, রেসাস বানর সহ নানা প্রজাতির পশুপাখি। এছাড়াও এখানে নির্মিত হয়েছে কাঠের ট্রেইল, টাওয়ার।এখানে বাংলাদেশের একমাত্র কুমিরের প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র অবস্থিত রয়েছে।
খুলনার মংলার দুবলার চর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে হিরণ পয়েন্ট ও দুবলার চরের মাঝখানে বঙ্গোপসাগরে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড অবস্থিত। এ দ্বীপটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ মিটার উঁচু এনং এর আয়তন প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার। আশেপাশের স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড খুঁজে পান।
বঙ্গবন্ধু চরে বহুবিপন্ন প্রজাতির পাখি, চামুচঠুঁটো বাটান ও ইউরেশীয় ঝিনুকখোরের দেখতে পাওয়া যায়।আর ভাগ্য ভাল হলে চরের পাশের নদীতে দেখা মিলবে ইরাবতী ডলফিনের। পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনাময় বঙ্গবন্ধু চর বা বঙ্গবন্ধু দ্বীপে পর্যটন কেন্দ্র, ওয়াচ টাওয়ার ইত্যাদি নির্মাণের বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে।
খুলনার দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে সুন্দরবনের বৈচিত্রময় স্থান কটকা অন্যতম।সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য কটকাতে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার যেখান থেকে সোজা উত্তরে কটকা সমুদ্র সৈকত।কটকা সমুদ্র সৈকতটি জামতলা সমুদ্র সৈকত হিসাবে পরিচিত। অনেক নির্জন ও পরিচ্ছন্ন সৈকতের বেলাভূমিজুড়ে চোখে পড়ে কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম। কটকা সৈকতটি সোজা পূর্বদিকে কচিখালিতে গিয়ে মিশেছে যার ঢেউয়ের আকার অত্যন্ত পরিবর্তনশীল এবং অজ্ঞাত চোরাবালি জন্য পানিতে নামা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।সূর্যাস্ত দেখার জন্য এই সমুদ্র সৈকত একটি আদর্শ স্থান।
খুলনার দর্শনীয় স্থানসমূহ নিয়ে লিখলে লেখার শেষ নেই।এখানে মাত্র অল্প কয়েকটি স্থানের বর্ননা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য স্থান রয়েছে খুলনা জেলায় যা ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বাক্ষী।আর খুলনা জেলার এসব গুরুত্বপুর্ন ও নয়নাভিরাম জায়গায় গিয়ে আপনি মন ও দৃষ্টি প্রশান্ত করতে পারবেন।তাই আপনার পরবর্তী ভ্রমণ স্থান হোক খুলনা জেলা।
মানুষের মন যেহেতু আছে এটা ভালো কিংবা খারাপ থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। একটা…
বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে সাথে, ভালো মানের মেডিকেল কলেজের তালিকা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।…
গল্পের বই পছন্দ করেন? পড়ার জন্য সেরা গল্পের খোজে আছেন? সে সুবাদে অনলাইনে সার্চ করে…
যারা সঠিক তথ্যটি জানেনা তাদের অনেকের ধারণা - ভিসা এবং পাসপোর্ট মূলত একই কাজ করে…
আপনার কি Loan বা ঋণ প্রয়োজন? আচ্ছা আপনি কি একজন প্রবাসী কিংবা আপনার পরিবারের কেউ…
একজন মুমিন ব্যক্তি হিসেবে আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত আপনি যে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাকে…