জাতীয়

সিআইবি রিপোর্ট কি । e-CIB রিপোর্ট নমুনা । সিআইবি রিপোর্ট বাংলাদেশ

যখনই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে কোনো প্রকার ঋন গ্রহন করতে চায় তখন তার সিআইবি রিপোর্ট চেক করা হয়। তাছাড়া কেউ যদি সামান্য ক্রেডিট কার্ডের সেবাও নিতে চায় তবেও তার CIB Report দেখা হয়। এবার অনেকেরই বুজতে অসুবিধা হয় যে সিআইবি রিপোর্ট কি? এটা দিয়ে কি হয় এবং কেনোই বা এতো গুরুত্বপূর্ণ এই রিপোর্ট।  

উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে CIB report সংক্রান্ত সকল বিষয় গুলো জানাবো যার মাধ্যমে সিআইবি রিপোর্ট সম্পর্কে সঠিক ধারনা পাওয়ার মাধ্যমে সেটির পেক্ষিতে নিজের তথ্য গুলো সাজাতে পারবেন। প্রথমেই জেনে নেয়া যাক সিআইবি রিপোর্ট কি সেই সম্পর্কে। 

সিআইবি রিপোর্ট কি । CIB Report

CIB এর ফুল ফর্ম হলো Credit Information Bureau. ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক গঠিত এক বিশেষ টিম যাদের কাজ হলো ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক যে সকল প্রতিষ্ঠান গুলো রয়েছে তাদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহন করা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানদের তথ্য উপাত্ত গুলো সংরক্ষন করা। কেমন সংরক্ষনই নয় বরং সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উক্ত ঋণ ঠিক ভাবে পরিশোধ করেছে কি না তা যাচাই বাছাই করে তার একান্ত একটি রিপোর্ট তৈরি করা। 

বলা যায় এটি একটি পুরো আমননামা যে কোনো না কোনো সময় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ঋণ সংক্রান্ত লেনদেন করেছে। যা বর্তমান সময় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহনের ক্ষেত্রে এই রিপোর্ট চেক করা হয়। যদি সিআইবি রিপোর্ট ভালো থাকে তবে খুব সহজেই ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যায়। 

ঠিক এই সময়েই একটা প্রশ্ন তৈরি হয়ে যায় যে, “ কিভাবে বুজবো সিআইবি রিপোর্ট ভালো নাকি খারাপ? “ এক্ষেত্রে আগে বুজতে হবে এখানে ঘটছে টা কি। ধরুন কোনো ব্যক্তি ঋনের জন্য ব্যাংকে আবেদন করলো। ব্যাংক সেই সময় প্রথমেই তার CIB রিপোর্ট চেক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক এর সার্ভার থেকে। তবে ব্যক্তি ভেদে, বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে সকল তথ্য শেয়ার করে না, করলেও তা খুবই অল্প পরিমানে করে থাকে। কেবল কি ব্যাংকের সাথেই? বাংলাদেশ ব্যাংক স্বয়ং তার সাথেও তথ্য শেয়ার করে না যার নামে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। তাহলে মূল ব্যাপারটা হচ্ছে CIB এর ক্রেডিট স্কোর। 

CIB রিপোর্টের ক্রেডিট স্কোর কিভাবে নির্ধারণ করা হয়?

ক্রেডিট নির্ধারন করা হয় তখনই যখন কোনো ব্যক্তি পূর্বে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহন করেছে এবং সেই ঋনের উর্থ কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করেছে। এক্ষেত্রে আপনার ক্রেডিট দুই ধরনের হতে পারে, ভালো এবং খারাপ। কোনটার ক্ষেত্রে ভালো আর কোনটার ক্ষেত্রে খারাপ সেটি বুজিয়ে বলছি। 

আপনি যখন গ্রহন করা ঋণ সময় মত প্রতি কিস্তি অনুযায়ী দিয়ে রাখেন তবে অবশ্যই আপনার রিপোর্ট ভালো দেখাবে। অন্যদিকে আপনি যদি কোনো কারনে ঋনের অর্থ কিস্তি মাফিক পরিশোধ করতে না পারে তবে সেক্ষেত্রে রিপোর্ট ও খারাপ আসবে। যখন কোনো ব্যাংকে আপনি ঋনের জন্য আবেদন করতে যাবেন তখন আপনার সেই রিপোর্ট চেক করা হবে। 

এক্ষেত্রে একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ঘটে থাকে। ধরুন আপনি কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহন করলেন এবং সব কিস্তি শেষে আপনার নিদ্দিষ্ট একট এমাউন্ট বাকি রয়ে গেলো। বুঝার সুবিধার্থে ধরে নিচ্ছি টাকার পরিমাণ ১০০১ টাকা। সব শেষে আপনি ১০০০ টাকা পরিশোধ করলেন বা ব্যাংকে জমা রাখার ফলে আপনার একাউন্ট থেকে ১০০০ টাকা কেটে নিলো ব্যাংক। এবার এই যে ১ টাকা ঋণ বাকি রয়ে গেলো, এই এক টাকার জন্যই আপনার CIB Report এ ক্রেডিট খারাপ রেজাল্ট দেখাবে। 

যার ফলে পরবর্তীতে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহন করতে গেলে আপনার রিপোর্ট অনুযায়ী আপনাকে ঋণ প্রদান করা নাও হতে পারে। তাছাড়া আপনি যাকে নমিনী করে ঋনের আবেদন করে থাকবেন তার CIB রিপোর্ট ও যদি খারাপ হয় তবেও আপনি ঋণ পাবেন না। রিপোর্ট ঠিক করতে আপনার উচিৎ হবে সেই একই ব্যাংকে ঋণ নিয়েছিলেন সেখানে যে টাকা বকেয়া ছিলো তা পরিশোধ করে দিতে হবে। 

CIB রিপোর্ট আপনি নিজে থেকে কখনই তৈরি করতে পারবেন না বা সংশোধন মূলক কাজ করতে পারবেন না, এমনকি কোনো ব্যাংক চাইলেও আপনার রিপোর্ট পজিটিভ করে দিতে পারবে না। 

সিআইবি রিপোর্ট বাংলাদেশ

বাংলাদেশে যখন খেলাপী ঋনের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেড়েই যাচ্ছিলো তৎকালীন ১৯৯২ সালে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক খাত সংস্কার প্রকল্প গ্রহন করা হয় যেখানে সিআইবি প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এই টিমের মূল কাজ ছিলো খেলাপী ঋনের বিস্তার রোধ করা। পরবর্তীতে সিআইবি প্রতিটা ঋণ গ্রহনকারীর উপর তাদের রিপোর্ট গঠন শুরু করে। এবং সেই ঋনের ক্লিয়ারেন্সের পর যদি একই ব্যক্তি অন্য কোথাও ঋনের জন্য আবেদন করে তখন তার সিআইবি রিপোর্ট চেক করা হয়। যদি সিআইবি রিপোর্ট ভালো থাকে তবেই তাকে ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। দেখা গেলো এই প্রকল্পের সফলতা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিলো যার মানে এই যে, ঋণ খেলাপীর সংখ্যা দিন দিন কমে আসছিলো।  

প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রতি মাসেই বিতরণকৃত ঋনের তথ্য সিআইবি এর কাছে পাঠাতে হয়। প্রতিটি নতুন ঋণ হিসেব করা হলে তা ব্যাংক কতৃক সিআইবি এর কাছে পাঠানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ঋণ যদি অবলোপন করা হয় তাহলেও সেই রিপোর্ট সিআইবি এর কাছে পাঠাতে হবে। 

CIB যে কেবল ব্যাংকের জন্য তা কিন্তু নয়। শেয়ার বাজারেও সিআইবি এর প্রভাব রয়েছে। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে, কোনো কোম্পানির পরিচালকদের মধ্যে কেউ যদি ঋণ খেলাপী কর তাহলে সেই কোম্পানির প্রাথমিক গণ প্রস্তাব বা রাইট শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব বিবেচনার যোগ্য করা হয় না। যখনই কোনো প্রস্তাব বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এর কাছে আসলে তারা প্রথমেই CIB রিপোর্ট চেক করে থাকে। যদি রিপোর্ট ভালো না হয় তবে তাদের প্রস্তাব বাতিল করা হয়ে থাকে। তাহলে বুজতেই পারছেন সিআইবি এর রিপোর্ট কতটা শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করে এবং কতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

অনলাইনে সিআইবি রিপোর্ট

১৯৯২ সালে প্রথম বারের মত সিআইবি রিপোর্ট সিস্টেম চালু করা হলেও ২০১১ সালে তা অনলাইনে শিফট করা হয়েছে। আগে খাতা কলমে প্রতিটা হিসাব রাখা হলেও বর্তমানে অনলাইনে খুব সহজেই এই সকল তথ্য পাওয়া যাবে। ২০১৫ সালে নতুন করে CIB Online Solution চালু করা হয়। বর্তমান সিস্টেম অনুযায়ী, কেউ যদি ঋণ গ্রহন করতে চায় তবে তার কাছে থেকে নেয়া তথ্যের আলোকে অনলাইনে সিআইবি রিপোর্ট চেক, নবায়ন, পুনঃতফসিলিকরন করা হয়। যা আর্থিক খাতে ঋণ খেলাপীর পরিমাণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। 

এই সিস্টেমটি এতোটাই কার্যকর যে, দিন রাত ২৪ ঘন্টাই নিরিবিচ্ছিন্ন ভাবে ব্যাংক গুলো ঋনের তথ্য প্রেরন করতে পারছে এবং সিস্টেম থেকে সার্চ করার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঋণ ইস্যু করা যাবে কি না সেই বিষয়ে জানতে পারছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেবা আরো বেশি দ্রুত ও উন্নত সাধন হয়েছে। এমনকি বর্তমানে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে ঋণ খেলাপীরা যেনো অংশগ্রহন করতে না পারে সেই ব্যাপারেও সিআইবি এর রিপোর্ট ব্যাপক ভাবে ভূমিকা পালন করছে। 

অনলাইনে সিআইবি সিস্টেম চালু হওয়ার ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক গুলো সহজেই সিআইবি রিপোর্ট সংগ্রহ করতে পারছে যার বাংলাদেশের ব্যাংকিং যোগাযোগকে দিয়েছে এক নতুন রূপ। তাছাড়া, প্রতিবার ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন হয় না। ঋণ আবেদনের সময় আবেদনকারীর কাছ থেকে NID, TIN Certificate, ট্রেড লাইসেন্স সহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা বাঞ্ছনীয় করা হয়েছে। তবে হ্যা, সিআইবি রিপোর্ট একটি গোপনীয় বিষয় বলে ব্যক্তি পর্যায়ের কেউই এটা সরবরাহ করতে পারবে না। 

সবশেষে একটি তথ্য দেয়ার মাধ্যমে আর্টিকেলটি সমাপ্ত করি, এবং সেটি হলো : CIB রিপোর্টে মোট ৭ টি স্টেপ রয়েছে। যার মধ্যে প্রথম ৩ টি স্টেপের জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের জন্য Eligible হয়ে থাকে। এবং পবর্তী যে ৪ টি স্টেপ রয়েছে সেই চারটি স্টেপের জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের জন্য Eligible হয় না। 

সবশেষে

পরিশেষে, এই ছিলো সিআইবি রিপোর্ট সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বহুল আর্টিকেল যেখানে সিআইবি রিপোর্ট কি, বাংলাদেশে সিআইবি রিপোর্ট এর প্রভাব, CIB Report এর স্কোর নির্ধারন, প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে CIB Report সংক্রান্ত যে সকল কনফিউশান ছিলো তার কিছুটা হলেও ক্লিয়ার হয়েছে। বাংলা আলো প্রতিনিয়ত এমন কনফিউজিং ব্যাপার গুলো সহজে ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে উপস্থাপন করে থাকে। আমাদের সঙ্গেই থাকুন। 

Bangla Alo

Recent Posts

ইসলামিক পদ্ধতিতে ওজন কমানো এবং সুস্থ থাকার উপায় জানুন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমাদের আজকের জানার বিষয় হলো -…

5 hours ago

বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন, নিজে চাষ শুরু করুন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই আল্লাহর ইচ্ছায় অনেক ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে বেগুন চাষ…

5 hours ago

ওমরা ভিসা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য ২০২৪

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আশা করি মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ও অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো…

6 hours ago

কনফেকশনারি ব্যবসার আইডিয়া || শুরু থেকে শেষ অব্দি

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই ভালো আছেন। আমাদের দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ…

6 hours ago

মন ভালো রাখার উপায় || মন সুস্থ রাখার ১০ টি টিপস

মানুষের মন যেহেতু আছে এটা ভালো কিংবা খারাপ থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।  একটা…

1 month ago

বাংলাদেশের সেরা ১০ টি মেডিকেল কলেজ

বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে সাথে, ভালো মানের মেডিকেল কলেজের তালিকা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।…

2 months ago