সুপারি ব্যবসা আইডিয়া: সুপারি (Areca Nut) হলো গোল আকৃতির ফল বা বীজ যা পানের মশলা হিসেবে পরিচিত এবং যারাই পান খেয়ে থাকে তাদের সুপারিও খেতে হয় [১] আবার অনেকে পান বাদে কেবল সুপারি খেয়েই থাকে। তবে এই আর্টিকেকে সুপারির ব্যবহারবিধি সম্পর্কে নয় বরং বাংলাদেশের আজারে সুপারি ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করা হবে। সুপারি ব্যবসা সংক্রান্ত কেস স্ট্যাডিতে আপনাকে স্বাগতম।
একটা পণ্যকে তখনই বাছাই করা হয় যখন সেই পণ্যটির নিদিষ্ট বাজারে চাহিদা ভালো থেকে থাকে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে বাংলাদেশের বাজারে সুপারি আইটেম থেকে ভালো লাভজনক সিজনাল ব্যবসা খুবই কমই আছে। বাংলাদেশের অধিংকাশ বৃদ্ধ লোকেরা আজকাল পান খেয়ে থাকে যা গ্রামাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যনীয়। আর পান খাওয়ার আবশ্যকীয় একটি উপাদান হলো সুপারি।
বুজতেই পারছেন এতো প্রয়োজনীয় একটা পণ্যের ব্যবসা করাটা কতটা জরুরি যদি আপনি ব্যবসা করে আয় করতে চান। সুপারি ব্যবসা আইডিয়া প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই বেশ কিছু Citeria অনুসরণ করে আগাবো। এই আর্টিকেলে জানাবো কেনো কিভাবে এবং কোন সময়ে সুপারি ব্যবসা করা ঠিক হবে।
পাশাপাশি থাকবে কোথা থেকে সুপারি আনতে পারবেন এবং বিক্রয় প্রসেস সম্পর্কেও ধারনা দিবো। তাই আপনি যদি সুপারি ব্যবসা আইডিয়া গ্রহন এবং প্রকৃত পক্ষেই এই ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে চান তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য উপযোগী। শুরু করবো কেনো সুপারি ব্যবসা করা উচিৎ তা জানার মাধ্যমে।
যেমনটা প্রথমেই বললাম একটা ব্যবসা শুরু করার আগে ভাবা উচিৎ সেই পণ্যের চাহিদা কেমন, কত টাকা বিনিয়োগে কত রিটার্নের সম্ভাবনা আছে এবং সর্বোপরি কতটাকা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাবের মাধ্যমে কোনো পণ্য যদি পজিটিভ ইম্প্রেশন তৈরি করতে সক্ষম হয় তবে সেই পণ্যের সাথে কাজ করা শুরু করা যেতে পারে।
এমতাবস্থায় সুপারি ব্যবসা সম্পর্কে যে সকল তথ্য গুলো পাওয়া যায়:
১) সুপারি ব্যবসা অনেকটাই সিজনাল ব্যবসায়ের ক্যাটাগরিতে পরে, আপনাকে সারা বছর এই ব্যবসাতেই সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে না। বাংলাদেশের পেক্ষাপট অনুযায়ী শীতকালীন সময়ে সুপারির ফলন ভালো হয় এবং সেই সময়ই ব্যবসায়ীরা সুপারি ব্যবসা নিয়ে মেতে উঠে
২) আপনি যদি সত্যিকারের বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারী হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই ভালো পরিমাণের অর্থ বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক হবেন সুপারির ব্যবসা করার জন্য। কারন যত বেশি বিনিয়োগ তত বেশি রিটার্ণ আসার পসিবিলিটি রয়েছে এই ব্যবসায়ে।
৩) খুবই কম ঝুঁকি সম্পন্ন কয়েকটি ব্যবসা এর মধ্যে সুপারি ব্যবসা থাকবে অন্যতম কারন সুপারির পচনশীল পণ্যে রূপান্তর হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললে চলে। যেখানে সুপারি সংরক্ষন করাই হয় পানিতে ভিজিয়ে বা বন্ধ স্থানে আটকে রেখে সেখানে ঝুঁকি গ্রহনের চান্সই নেই।
৪) সুপারির বিভিন্ন প্রকার ও ভ্যারিয়েন্ট অনুযায়ী ভাগ ভাগ করে আলাদা আলাদা ব্যবসা করা সম্ভব।
৫) মার্কেটে চাহিদা থাকায় আপনি যদি মোটামোটি ভালো মানের সুপারি প্রোভাইড করতে পারেন তবে আপনি কাস্টমারের কাছে না বরং কাস্টমারই আপনাকে খুজে নিবে।
সচারচর দুই ধরনের সুপারি বেশি লক্ষ্যনীয় একটা কাচা সুপারি অন্যটা শুকনা সুপারি। মূলত সুপারিকে দুই ভাবেই পানের মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কেউ কাচা সুপারি বেশি পছন্দ করে আবার কেউ শুননা। এক্ষেত্রে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে একটি অথবা উভয় উপায়ে সুপারি সংরক্ষন করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করা উচিৎ।
শীতকালে যখন সুপারি গাছ থেকে তোলা হয় তখন মজুদকারীরা কাচা সুপারি মজুদ হিসেবে রাখতে সেই সুপারি গুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখে যাকে আঞ্চলিক ভাষাতে ভিজা সুপারি বলে, আবার অনেকে বস্তা বন্ধ করে সুপারি এমন ভাবে সংরক্ষন করে থাকে যাতে করে কোনো বাতাস সুপারিতে না ঢুকে।
এতে করে বেশ অনেক মাস যাবত সুপারি সংরক্ষন করা হয়। তাছাড়া আরেকতা ধরনের সুপারি (শুকনা সুপারি) এর ক্ষেত্রে এই দুইটির একটিও করা হয় না, বরং সুপারি গুলোকে সেভাবেই রেখে দেয়া হয় অথবা রৌদে শুকানো হয়। পরবর্তীতে সেগুলোর উপরের খোসা সরিয়ে মুল ফল বা সুপারি যাকে বলা হয় সেটাকে কুচি কুচি করে কেটে (এটাকে সুপারি কাটিংও বলে) সংরক্ষন ও সারা বছর বাজারে সাপ্লাই দিতে পারবেন।
সুপারি ব্যবসা আইডিয়া এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো আইডিয়া হলো স্টক করে রাখা। যেহেতু এই ব্যবসাটি সিজনাল তাই একবার স্টক করে সারা বছর আয়ের ব্যবস্থা করা যায়। সুপারি ব্যবসা করার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে – এপ্রিল থেকে জুলাই অব্দি। এই সময়ে যেহেতু নতুন সুপারি বাজারে আসে তাই তখন দাম তুলনামূলক কম থাকে। এই সময়ে স্টক করা বেশি লাভজনক।
খেয়াল রাখতে হবে ভেজা সুপারি সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য স্টক করে রাখা যায়, এক্ষেত্রে আপনি আপনি যথা সময়ে ভালো দাম পান বিক্রি করে দিবেন। তবে কোনো ভাবেই ১ বছরের বেশি সময়ে মজুদ রাখবেন না, এতে হিতে বিপরীত হয়ে আপনার মজুদকৃত সুপারি নষ্ট বা পচে যাবে।
বাংলাদেশের অনেক জেলা উপজেলা পর্যায়ে সুপারি ব্যাপক ভাবে চাষ করা হয় আপনি যেসব এড়িয়া থেকে তুলনামূলক খুব কম দামে সিজনকালীন সময়ে সুপারি কিনে সংরক্ষন করতে পারবেন। সেই সকল জেলা – উপজেলা গুলোর নাম হলো:
তাছাড়া আপনি আপনার স্থানীয় কোথাও যদি চাষ হয়ে থাকে বা কেউ যদি সিজনকালে বিক্রি করে সেক্ষেত্রে আপনার স্থানীয় স্থান থেকেই কিনে মজুদ করতে পারবেন। মূলত প্রায় সময়ই দেখা দেয় সিজনকালে দাম কম থাকলেও যখন সুপারি চাষ হয় না তখন সুপারির দাম বেড়ে যায় কারন চাহিদা সব সময়ই থেকেই থাকে।
উপরে যে স্থান গুলোর কথা বললাম সেগুলো হচ্ছে সুপারি কেনা বেচা করার জন্য সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস। শুধু মজুদকালীন বা চাষ কালীন সময়েই নয় বরং সারা বছরই সেখানে কেনা বেচা চলতেই থাকে। আপনার উচিৎ হবে সেই সকল মার্কেট গুলোতে খোজ রাখা যে কবে কত দাম উঠা নামা করছে। আসলে কি, অন্যান্য ব্যবসা থেকে সুপারি ব্যবসা কম ঝুঁকির কারন সুপারির দান অফ সিজনে বাড়ে বাদে কমে না।
সেসব এনালাইসিস করার মাধ্যমে আপনার সুবিধা মোতাবেক দামে সুপারি বিক্রি করে দিতে পারেন। আসলে এখানে ফিক্স কোনো মূল্য থাকে না, সবই বাজারের উঠান পাঠানের উপর নির্ভর করে। তবে কেবলই কি সেই মার্কেট? আপনি যদি চান বিভিন্ন ভাবে সুপারি বিক্রি করতে পারেন। উপায় গুলো বলছি:
১) আপনার এড়িয়ার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পাইকারি দামে বিক্রি করতে পারেন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে আপনি কি সেই দামেই বিক্রি করছেন কিনা যা অন্যসব স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে আপনার টার্গেট ও মার্কেট ক্যাচআপ করার পরিকল্পনা থেকে থাকলে তা ভিন্ন ব্যাপার।
২) একদম খুচরা পর্যায়ে চা-পানের দোকান গুলোতে বিক্রি করতে পারেন। যেহেতু সেসব দোকানে প্রতিদিন শত শত পান বিক্রি হয় তাই সেখানে যথেষ্ট পরিমাণের মার্কেট ভ্যালু পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে আপনি পাইকারি দাম ও খুচরা দামের মাঝ বরাবর একটা প্রাইজ ঠিক করে দোকানদারদের কাছে সুপারি বিক্রি করবেন। এভাবে আপনার লাভ অনেক বেশি পরিমাণেই হবে।
৩) কাচা সুপারি থেকে শুকনা সুপারির দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে কারন এটা প্রসেসিং খরচ বেশি ও কেজি হিসেবে বিক্রি করা হয়। যেখানে কাচা সুপারি পিস হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি কাচা সুপারি মজুদের পাশাপাশি শুকনা সুপারি তৈরির ব্যবস্থা করতে পারেন তবে আরো বেশি পরিমাণে সুপারি বিক্রি করতে পারবেন।
আসলে কোন ব্যবসা কত টাকা ইনভেস্ট করা উচিৎ এটা নির্ভর করবে সেই ব্যবসায়ের মার্কেট চাহিদা ও ভ্যালু এর উপর। তবে এর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনি কত টাকার ইনভেস্ট করার সক্ষমতা আছে। সুপারি ব্যবসায়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম হওয়ায় আপনি সঠিক ধারনা ও মার্কেট এনালাইসিস করে যত বেশি ইনভেস্ট করতে পারবেন তত বেশি লাভ হবে এই ব্যবসা থেকে।
সাধারণত ১৮০ টাকা থেকে প্রতি পোন শুরু হয় এবং এ থেকে আরো বেশি দাম হবে মানের দিক থেকে। যারা পোন শব্দটা বুজেন না তাদের জন্য বলছি প্রতি ৮০ টি সুপারিকে একত্রে পোন বলা হয়ে থাকে। এবার আপনি নিজেই ক্যালকুলেট করে বের করতে পারবেন যে আপনি কত টাকা ইনভেস্ট করতে পারবেন ও কত টুকু সুপারি মজুদ রাখতে পারবেন।
সুপারি ব্যবসা এমন একটি আয়ের মাধ্যম যেখানে আপনি চাইলে ৫০০০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন আবার ৫ লক্ষ টাকা অব্দিও এই ব্যবসায়ে ইনভেস্ট করতে পারবেন। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে সুপারি ব্যবসায়ে আপনার অবদান কি হবে – খুচরা ব্যবসায়ী, পাইকারী ব্যবসায়ী নাকি স্টক ব্যবসায়ী?
এই ছিলো সুপারি ব্যবসা আইডিয়া সংক্রান্ত কেস স্ট্যাডি মূলক আর্টিকেল যেখানে আলোচনা করা হয়েছে সুপারির ব্যবসার, ধরন, ব্যবসায় করার নিয়ম সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য। উক্ত আর্টিকেলটিতে কেবল ধারনা দেয়া হয়েছে কিভাবে একজন মার্কেটে এনালাইসিস করবে এবং সুপারি ব্যবসা করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবে।
ব্যবসা হলো যার যার একক বুদ্ধিভিত্তিক কার্যক্রম তাই নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে যেকোনো সেক্টরে ভালো ফলাফল লাভ করতে পারবেন। যদি ব্যবসা সংক্রান্ত আরো কেস স্ট্যাডি মূলক আর্টিকে পেতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তবে বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ব্যবসা বাণিজ্য নামক ক্যাটাগরি অনুসরণ করুন। ধন্যবাদ।
অর্কিড, খুব কঠিন একটা নামের সুন্দর একটা ফুল। আজকে আপনাদের সাথে চমৎকার একটি ফুল নিয়ে…
প্রতিটা দেশেরইই একক কিছু দেশাত্মবোধক গান থাকে তেমনি বাংলাদেশেও রয়েছে এমন অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান। আমরা…
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমাদের আজকের জানার বিষয় হলো -…
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই আল্লাহর ইচ্ছায় অনেক ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে বেগুন চাষ…
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আশা করি মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ও অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো…
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই ভালো আছেন। আমাদের দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ…