বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জেলা হলো রাজশাহী। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে বড় শহর এই রাজশাহী। রাজশাহীর দর্শনীয় স্থানসমূহ নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি লিখছি। শহরটির অবস্থান পদ্মা নদীর তীরে। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সমৃদ্ধ এ শহরে আছে অসংখ্য স্থাপনা ও মনোরম প্রাকৃতিক জায়গা।
এ জেলাটি আম, লিচু ও রেশম বা সিল্ক বস্ত্রের জন্য বিখ্যাত।এছাড়া দেশের ৮ টি শিক্ষা বোর্ডের একটি এই রাজশাহীর বোর্ড।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও রাজশাহী শহরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলোর শিক্ষার খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বিখ্যাত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য রাজশাহী শিক্ষানগরী নামে পরিচিত।এ শহরটি নওহাটা এবং কাটাখালী এ দুটি স্যাটেলাইট টাউন দ্বারা বেষ্টিত।পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নের দিক দিয়ে রাজশাহী জেলা প্রথম।
রাজশাহী জেলার আয়তন ২,৪০৭.০১ বর্গকিলোমিটার।এটি একটি সীমান্তবর্তী জেলা।রাজশাহী জেলার নামকরণ হয়েছে রাণী ভবানীর জমিদারীর নামানুসারে।পদ্মার উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ন এলাকা যেমন পাবনা, ঢাকা, নদীয়া, যশোর, বর্ধমান, বীরভূম নিয়ে এই এলাকা রাজশাহী চাকলা নামে অভিহিত হয়। ধারণা করা হয় ‘রামপুর’ এবং ‘বোয়ালিয়া’ নামক দু’টি গ্রামের সমন্বয়ে রাজশাহী শহর গড়ে উঠেছিল যা পরবর্তীকালে রাজশাহী নামেই সর্ব সাধারণের নিকট অধিক পরিচিতি লাভ করে।সাধারণভাবে বলা যায় এই জেলায় বহু রাজা-জমিদারের বসবাস ছিল, এজন্য এ জেলার নাম হয়েছে রাজশাহী।
১৯৮৪ সালে বৃহত্তর রাজশাহী জেলার ৪ টি মহকুমাকে নিয়ে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর এবং নবাবগঞ্জ- এই চারটি ভিন্ন ভিন্ন জেলায় উন্নীত করা হয়। নবাবগঞ্জ জেলার নাম পরবর্তীকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ করা হয়।
রাজশাহী জেলার রয়েছে ৯ টি উপজেলা।যথা গোদাগাড়ি উপজেলা,তানোর উপজেলা,মোহনপুর উপজেলা,বাগমারা উপজেলা,দুর্গাপুর উপজেলা,বাঘা উপজেলা,চারঘাট উপজেলা,পবা উপজেলা ও পুঠিয়া উপজেলা।
রাজশাহীর দর্শনীয় স্থানসমূহ নিয়ে নিচে বিস্তারিত তথ্য রইলো:
রাজশাহীর প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন পুঠিয়ার রাজবাড়ী। এটিকে পাঁচআনি জমিদারবাড়ী বলা হয়। মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী ১৮৯৫ সালে ইন্দো ইউরোপীয় নকশার আদলে আয়তাকার দোতলা এ বর্তমান রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন।
ভবনের সামনের স্তম্ভ, অলংকরন, কাঠের কাজ, কক্ষের দেয়ালে ও দরজার উপর ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণ শৈলীর পরিচয় বহন করে। নিরাপত্তার জন্য রাজবাড়ির চারপাশে যে পরিখা খনন করা হয়েছিল তাও চমৎকার ।পুঠিয়া রাজবাড়ীর চারপাশে ছয়টি দিঘী আছে যেগুলোর প্রত্যেকটার আয়তন ছয় একর করে। মন্দিরও আছে ছয়টি। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালেই অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ করা আছে।এ ছাড়া রয়েছে রানীর স্নানের ঘাট, অন্দর মহল ও বিশাল রাজবাড়ী প্রাঙ্গণ।এ সুন্দর রাজবাড়ীটি ঘুরে দেখতে হলে যেতে হবে রাজশাহী।
রাজশাহী শহরে ঐতিহাসিক বাঘা মসজিদ অবস্থিত। ইট দিয়ে তৈরি প্রাচীন এই মসজিদটিতে ১৪ টি গম্বুজ রয়েছে।বাঘা মসজিদের ভেতরে এবং বাইরে প্রচুর পোড়া মাটির ফলক দেখা যায়। মসজিদের ভেতরে উঁচু স্থানে একটি বিশেষ নামাজের কক্ষ রয়েছে যেটা কার বা কাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল তা এখনো অজানা।
এ মসজিদের পূর্ব পাশে বিশাল একটি দীঘি এবং অন্য পাশে একটি কবরস্থান রয়েছে। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের ফলে এই মসজিদের ছাদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে বাঘা মসজিদের গম্বুজ এবং ছাদ পুনঃনির্মাণ করা হয়।তাই দেরি না করে মসজিদটি দেখে আসতে পারেন।
রাজশাহী জেলার নওদাপাড়া বড় বনগ্রামে অবস্থিত শিশু পার্কটি এ শহরের একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। এখানে নয়নাভিরাম পিকনিক স্পট, সব বয়সীদের জন্য দেশি-বিদেশি রাইড, সুবিশাল লেক এবং নৌকা ভ্রমনের সুব্যবস্থা রয়েছে।এ সুন্দর পার্কটি রাজশাহীর দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে একটি। এর আরেক নাম শহীদ জিয়া শিশু পার্ক।
রাজশাহী শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হলো এ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর যা বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। আর প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের তালিকার দিক দিয়ে বরেন্দ্র জাদুঘর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম। ১৯১০ সালে নাটোরের দিঘাপাতিয়ার জমিদার শরৎ কুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয় কুমার মৈত্র এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রামপ্রসাদ চন্দ্র বাংলার ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করেন।তারা বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন যা পরবর্তীতে বিশাল সংগ্রহে পরিণত হয়।এসব নিদর্শন নিয়ে ১৯১৩ সালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়।মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ছাড়াও বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তি বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে এসেছেন।
রাজশাহী জেলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান হলো রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা।এটা পদ্মার তীরের রেসকোর্স ময়দানের ৩২.৭৬ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে। রাজশাহী শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪.২ কিলোমিটার।১৯৭৪-৭৬ সালে এখানে চিড়িয়াখানার পাশাপাশি একটি শিশু পার্ক নির্মাণ করা হয়। যার কারনে রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানাটি শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা হিসেবে পরিচিত হয়ে যায়।
চিড়িয়াখানার প্রবেশ গেইটে বিদ্যমান জিরাফের বিশাল ভাস্কর্য ও মৎস্য কুমারীর ফোয়ারা নজরে কাড়বে সবার। নানারকম ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের ছায়া ঘেরা পার্কের ভিতরে আছে বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য ও নান্দ্যনিক ব্রিজ সহ একটি ছোট্ট লেক। চিড়িয়াখানায় উল্লেখযোগ্য সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে বাজরিকা, বালিহাস, ঘোড়া, হরিণ, উদবিড়াল, অজগর সাপ, কুমির সহ বিভিন্ন জলজ ও স্থলজ পশুপাখি। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের এই উদ্যানের কৃত্রিম পাহাড় থেকে পদ্মা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এছাড়া পার্কে দর্শনার্থীদের চিত্তবিনোদনের জন্য প্যাডেল বোট, নাগর দোলা সহ বেশকিছু আকর্ষণী রাইড রয়েছে।
রাজশাহীর দর্শনীয় স্থানসমূহের একটি হলো বাঘা উপজেলায় বাঘা দীঘির গ্রামীণ শান্ত পরিবেশে গড়ে ওঠা উৎসব পার্ক। ২০১৪ সালে প্রায় ৮০ বিঘা জায়গায় সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত উদ্যোগে পার্কটি গড়ে তোলা হয়। উৎসব পার্কটি গ্রামের সাধাসিধে মানুষদের জীবনে শহুরে বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে।
উৎসব পার্কের রাইডের মধ্যে আছে ট্রেন, নাগরদোলা, ঘূর্ণি এবং দোলনা সহ ৮টি ভিন্নধর্মী রাইড, বিভিন্ন পশু পাখির ভাস্কর্য, বসার বেঞ্চ, লেক এবং পিকনিক স্পট যা সারাদিন আনন্দে কাটানোর উত্তম জায়গা।
সাফিনা পার্ক রাজশাহীর দর্শনীয় স্থানসমূহের আরেকটি নিদর্শন। গোদাগাড়ী উপজেলায় ২০১২ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে এ পার্কটি।উপজেলার একমাত্র এই পার্কটি বিনোদন আয়োজনে সাজানো সব বয়সী দর্শনার্থীদের কাছে চিত্তবিনোদন ও পিকনিক স্পট হিসেবে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়।
রাজশাহী জেলার আরেকটি সুন্দর স্থান হলো গোদাগাড়ী উপজেলায় অবস্থিত সরমংলা ইকো পার্ক।২০০৩ সালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এ উপজেলার নিত্যনন্দপুর থেকে হরিশংকরপুর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার খাঁড়ি খনন করা হয়।এ খাঁড়ির দুই পাড়ে বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করা হয়।যা ইকো পার্ক হিসেবে পরিচিত।
রাজশাহীর দর্শনীয় স্থানসমূহ নিয়ে লিখলে শেষ হবে না এর বর্ননা। কারণ রাজশাহী জেলায় দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই। উপরে মাত্র কয়েকটি জায়গার বর্ননা দিয়েছি। এগুলো ছাড়াও রয়েছে ঢোপকল,পদ্মা নদীর বাঁধ, কিসমত মারিয়া মসজিদ,কৃষ্ণপুর গোবিন্দ মন্দির,ধানোরা ঢিবি,তামলি রাজার বাড়ি, গোবিন্দ মন্দির,ওডভার মুনক্সগার্ড পার্ক প্রভৃতি নয়নাভিরাম জায়গা।
এসব স্থান ঘুরে দেখার পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, আম বাগান,লিচু বাগান,সিল্ক কারখানা ইত্যাদি জায়গাও দেখার মত।এত সুন্দর আর গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহ কিন্ত একদিনে ঘুরে দেখে শেষ করা যাবে না।তাই রাজশাহীতে এলে হাতে কয়েকদিন সময় নিয়ে আসুন।ধীরে ধীরে সব জায়গা ঘুরে দেখলে মন,নয়ন জুড়ানোর পাশাপাশি জ্ঞানের পরিধিও বাড়বে।
প্রতিটা দেশেরইই একক কিছু দেশাত্মবোধক গান থাকে তেমনি বাংলাদেশেও রয়েছে এমন অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান। আমরা…
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমাদের আজকের জানার বিষয় হলো -…
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই আল্লাহর ইচ্ছায় অনেক ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে বেগুন চাষ…
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আশা করি মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ও অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো…
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই ভালো আছেন। আমাদের দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ…
মানুষের মন যেহেতু আছে এটা ভালো কিংবা খারাপ থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। একটা…