শরীর সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়াম | নিয়মিত ব্যায়াম করার উপকারিতা | সুস্বাস্থ্যে ব্যায়াম

ব্যস্ত জীবনে শরীর সুস্থ রাখার ব্যায়াম এর কার্যকারীতা অনেক বেশি। আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাহলে তার প্রতিদান স্বরূপ আপনি ফিট থাকবেন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং সুস্থ ভাবে আরও বেশি দিন বাঁচতে পারবেন।

ইন্ট্রোডাকশন

আমরা সবাই জানি যে, প্রতিদিন এর ব্যায়াম সু- স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। তবে আমাদের মধ্যে যারা সাধারণত বিভিন্ন ধরন এর কাজ কর্মের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছেন তারা নিয়মিত শরীর সুস্থ রাখার ব্যায়াম এর দিকে খুব একটা নজর দিতে পারেন না।

 

তবে শরীর কে সুস্থ, সবল, রোগ মুক্ত এবং ফিট রাখা সকলেরই উচিত। সেজন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা একজন সুস্থ মানুষ এর জন্য খুবই জরুরি একটি বিষয়। শরীর সুস্থ রাখার ব্যায়াম এর ক্ষেত্রেও রয়েছে এমন কিছু প্রকার এর ব্যায়াম যা প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। 

 

এমন কিছু ভিন্ন ভিন্ন প্রকার এর শরীর সুস্থ রাখার ব্যায়াম এর ধরন নিয়ে আমরা আজকের আর্টিকেল এ আলোচনা করবো। এছাড়াও তার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করলে কি কি উপকার পেতে পারেন এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম কতোটা উপকারী সে সকল বিষয় নিয়ে বিভিন্ন অজানা তথ্য আপনাদের জানাবো।

তাহলে চলুন শুরু করা যাক 

শরীর সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়াম

 

সুস্থ, সবল থাকতে হলে ছোট কিংবা বড় সকলের জন্যই শরীর সুস্থ রাখার ব্যায়াম এর কোনো বিকল্প নেই বললেই চলে। ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ এবং ভালো কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যা যুগ যুগ ধরে মানুষ নিজেদের সু- স্বাস্থ্যের জন্য ব্যবহার করছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল, 

 

১. পুশ- আপ বা বুকডন চর্চা

 

পুশ- আপ বা বুকডন চর্চা হলো সবচেয়ে মৌলিক তবে কার্যকরী, শরীর সুস্থ রাখার ব্যায়াম এর মধ্যে একটি। যা আপনি খুব সহজেই এবং অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পাদন করতে পারেন। প্রথমেই আপনার ব্যায়াম এর অবস্থানে যান। আপনার বাহুদ্বয় সোজা রাখুন – কনুই লক করা হতে এড়িয়ে চলুন।

 

এখন আপনার হাতের তালু মেঝে তে সমতল করে রাখুন এবং আপনার কব্জি, কনুই এবং কাঁধগুলি সারি বদ্ধ করে রাখুন। আপনার কোরকে নিযুক্ত করুন যাতে পিঠ কোনো ভাবেই নিচের দিকে না ঝুকে না যায়। আপনার ঘাড় থেকে আপনার নিতম্ব পর্যন্ত মেরুদণ্ড সোজা রাখবেন। ধীর এবং নিয়ন্ত্রিত গতিতে আপনার কনুই ৯০° তে বাঁকিয়ে নিতে হবে। 

 

শরীর সুস্থ রাখার ব্যায়াম অর্থাৎ পুশ- আপ এর অবস্থানে নিজেকে রেখে ধাক্কা দিন। আপনি যতো শক্তিশালী হবেন ততোই আপনার নীচের অবস্থান টি ধরে রাখতে বা পিছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার আগে আপনার চিবুক বা আপনার বুক কে মেঝেতে নিয়ে আসার জন্য কাজ করতে পারবেন। এভাবেই প্রতিদিন পুশ- আপ বা বুকডন চর্চার মাধ্যমে নিজেকে ফিট রাখতে পারেন।

 

নিয়মিত পুশ- আপস বা বুকডন চর্চা করার উপকারিতাঃ

 

  • সম্পূর্ণরূপে শারীরিক সক্রিয় করণের মাধ্যমে দেহের কার্যকরী শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • স্বাস্থ্য এবং জীবনীশক্তির জন্য পেশী প্রসারিত করে।
  • আপনার কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম উন্নত করে।
  • পুরো শরীর এর পেশী সংজ্ঞা বৃদ্ধি এবং HGH প্রচারে সাহায্য করে।
  • আঘাত থেকে আপনার কাঁধ কে রক্ষা করে।
  • নিয়মিত পুশ- আপস বা বুকডন চর্চা আপনার ভঙ্গি কে উন্নত করে।
  • লোয়ার ব্যাক ইনজুরি প্রতিরোধে এই ব্যায়াম খুবই কার্যকরী ।
  • টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি এবং অস্টিওপোরোসিস উন্নয়ন হ্রাস করতেও সাহায্য করে।

 

২. সাঁতার

 

সাঁতার একটি  সর্বাঙ্গীণ ব্যায়াম। আপনি যদি আরও সক্রিয় হতে চান এবং সুস্থ থাকতে চান, আপনার বয়স বা ক্ষমতা যাই হোক না কেন সেক্ষেত্রে সাঁতার কে একটি কার্যকরী শরীর সুস্থ রাখার ব্যায়াম হিসেবে ধরা হয়। 

 

আপনি যদি সাঁতার না পারেন তবে তা শিখতে কখনই দেরি করবেন না। বেশির ভাগ পুল গুলো বিভিন্ন ধরনের চাহিদা এবং ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে যার ফলে আপনি খুব সহজেই সাঁতার শিখে নিতে পারেন কোনো প্রকার ঝুঁকি ছাড়াই। 

 

বেশিরভাগ মানুষের জন্য, সাঁতার একটি নিরাপদ এবং কার্যকরী ব্যায়াম। আপনি যদি বিদ্যমান স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত হন, তাহলে সাঁতার কাটা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ সাঁতার বিশেষজ্ঞ এর সাথে যোগাযোগ করে নিতে পারেন।

 

নিয়মিত সাঁতার কাটার উপকারিতাঃ

 

  • নিয়মিত সাঁতার কাটা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে পারে, যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং স্ট্রোক ইত্যাদি এর হাত থেকে রক্ষা করে।
  • এটি আপনার মেজাজ কে ফুরফুরে করে তুলতে সাহায্য করে এবং আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • যে সকল বাচ্চারা সাঁতার কাটে তারা পরবর্তীতে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তারা তখন হয়ে ওঠে অন্য দের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয়।
  • সাঁতার আপনাকে স্মার্ট করে তোলে।
  • সাঁতার টিম- বিল্ডিং এর দক্ষতা শেখায় যা ব্যক্তিগত জীবনে খুবই প্রয়োজনীয় ।
  • জগিং এর চেয়ে সাঁতার বেশি ক্যালোরি বার্ন করে থাকে, যার ফলে আপনি থাকতে পারবেন ফিট।
  • সাঁতার আপনার বার্ধক্য কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
  • হাঁপানি রোগীদের  জন্য সাঁতার ভালো।
  • সাঁতার শেখায় লক্ষ্য ওরিয়েন্টেশন।

 

৩. হাঁটা

 

হাঁটা এমন একটি শরীর সুস্থ রাখার ব্যায়াম, যা আপনি যে কোনও জায়গায়, যে কোনও সময় করতে পারেন। এই ব্যায়ামটি কেবল নতুন দের জন্য নয়, এমনকি খুব ফিটরাও হাঁটা থেকে একটি ভাল ওয়ার্কআউট পেতে পারে।

 

নিউইয়র্কের বেথ ইজরায়েল মেডিকেল সেন্টারের অর্থোপেডিক এবং স্পোর্টস রিহ্যাবিলিটেশন এর ডিরেক্টর রবার্ট গোটলিন বলেন, “দ্রুত হাঁটার ফলে প্রতি ঘন্টায় ৫০০ ক্যালোরি পর্যন্ত বার্ন হতে পারে।” আপনি প্রথম সপ্তাহে দিনে পাঁচ মিনিট হাঁটার মাধ্যমে আপনার ব্যায়াম শুরু করতে পারেন।

 

তারপরে আপনি কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর্যন্ত আপনার ব্যায়াম চালিয়ে যেতে পারেন। আরও বেশি স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য, সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন গুলোতে কমপক্ষে ৬০ মিনিটের শারীরিক কার্যকলাপের দিকে লক্ষ্য রাখুন।

নিয়মিত হাঁটার উপকারিতাঃ

 

  • হাঁটা আপনার ক্যালোরি বার্ন করে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • সপ্তাহে পাঁচ দিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার ফলে, আপনার করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে প্রায় ১৯% পর্যন্ত।
  • খাওয়ার পরে অল্প সময়ের জন্য হাঁটার ফলে আপনার রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে।
  • হাঁটার ফলে আপনার হাঁটু এবং নিতম্ব সহ জয়েন্ট গুলিকে সুরক্ষিত হতে সাহায্য করতে পারে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • এক কাপ কফি খাওয়ার চেয়ে আরও কার্যকর শক্তি বৃদ্ধি পায় হাঁটার মাধ্যমে।
  • হাঁটা আপনার মাস্তিষ্ক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং তার সাথে সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতেও সাহায্য করতে পারে।

 

৪. সাইকেল চালানো

 

সাইকেল চালানো মূলত একটি বায়বীয় ক্রিয়াকলাপ, যার অর্থ হল আপনার হৃদপিণ্ড, রক্তনালী এবং ফুসফুস সবই একটি ওয়ার্কআউট করে। সাইকেল চালানো সেরা কার্ডিও ওয়ার্কআউট গুলোর মধ্যে অন্যতম। আপনি প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৪০০ ক্যালোরি বার্ন করতে পারেন এই শরীর সুস্থ রাখার ব্যায়াম এর মধ্য দিয়ে।

 

এছাড়াও এটি আপনার পা, নিতম্ব এবং আপনার নীচের শরীরকে শক্তিশালী করে তুলতে পারেন। আপনি যদি আপনার পিঠ, হাঁটু এবং গোড়ালিতে মৃদু ওয়ার্কআউট করতে চান, সেক্ষেত্রে সাইকেল চালানোর ব্যায়াম টি হবে নিঃসন্দেহে একটি দুর্দান্ত পছন্দ। 

 

আপনি গভীরভাবে শ্বাস নেবেন, ঘাম দেবেন এবং শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা পাবেন, যা আপনার সামগ্রিক ফিটনেস স্তরকে উন্নত করবে। নিয়মিত সাইকেল চালানো কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

নিয়মিত সাইকেল চালানোর উপকারিতাঃ

 

  • হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
  • সাইকেল চালানোর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের চর্বি খুব সহজেই কমতে থাকে।
  • অতিরিক্ত রক্তচাপের মাত্রা হ্রাস করে।
  • পেশী শক্তি এবং নমনীয়তা বৃদ্ধিতে সাইকেল চালানো খুবই উপকারী।
  • কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • উদ্বেগ এবং অতিরিক্ত বিষণ্নতা হ্রাস করে।
  • নিয়মিত সাইকেল চালালে আপনার ত্বক UV বিকিরণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পায়।
  • বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলিকে কমাতে সাহায্য করে।

 

ইতিকথা

 

সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং তার পাশাপাশি সবল আর সুন্দর দেহ গঠন এর ক্ষেত্রে শরীর সুস্থ রাখার ব্যায়াম এর জুড়ি নেই। আমাদের আজকের আর্টিকেল টি অনুসরণ করে নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে আপনি হয়ে যেতে পারেন সু- স্বাস্থ্যের অধিকারী।

 

Bangla Alo

Recent Posts

৫টি জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গানের লিরিক্স

প্রতিটা দেশেরইই একক কিছু দেশাত্মবোধক গান থাকে তেমনি বাংলাদেশেও রয়েছে এমন অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান।  আমরা…

2 days ago

ইসলামিক পদ্ধতিতে ওজন কমানো এবং সুস্থ থাকার উপায় জানুন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমাদের আজকের জানার বিষয় হলো -…

3 days ago

বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন, নিজে চাষ শুরু করুন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই আল্লাহর ইচ্ছায় অনেক ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে বেগুন চাষ…

3 days ago

ওমরা ভিসা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য ২০২৪

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আশা করি মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ও অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো…

3 days ago

কনফেকশনারি ব্যবসার আইডিয়া || শুরু থেকে শেষ অব্দি

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই ভালো আছেন। আমাদের দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ…

3 days ago

মন ভালো রাখার উপায় || মন সুস্থ রাখার ১০ টি টিপস

মানুষের মন যেহেতু আছে এটা ভালো কিংবা খারাপ থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।  একটা…

1 month ago